শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ, ১৪৩১
ভূঁইয়া কামাল, মুলাদী (বরিশাল)।।
বরিশালের মুলাদী উপজেলার সীমান্তবর্তী বাটামারা ও সফিপুর ইউনিয়নে বিগত ২০-২৫ বছর যাবৎ আকন ও হাজী গ্রুপের দ্বন্ধ চলে আসছিল। আকন ও হাজী গ্রুপের দ্বন্ধে ২০০১-২০২৩ পর্যন্ত ২৮টি হত্যা, ৭টি ডাকাতি, ১২০টি নারী ও শিশু মামলা, ২২টি অপহরণ ও ৭৫৭টি অন্যান্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে । মামলা দায়ের করা হয়েছে ৯৩৪টি, আসামী করা হয়েছে ৪ হাজার ৪৩৯ জনকে।
বিরাজমান বিবাদ নিরসনে ২০২৩ সালের ২২ জুলাই শনিবার বিকেল ৪টায় বাটামারা ইউনিয়নের জাগরনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে দুই পক্ষ নিয়ে সম্প্রীতি সমাবেশ ও শান্তি চুক্তি করা হয়েছিল।
বরিশাল, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলা পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় সম্প্রীতি সমাবেশের মাধ্যমে বিবাদমান দুই গ্রুপের মধ্যে শান্তি চুক্তি করা হয়। দুপক্ষের ১৫জন করে ৩০জনের হাতে হাত মিলিয়ে স্টাম্পে চুক্তির মাধ্যমে শান্তি সম্প্রীতি করা হয়।
সমাবেশে ছিলেন, বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম (বিপিএম), মাদারীপুর জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মাসুদ আলম, শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মাহাবুবুল আলম, মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান, বরিশাল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শাহজাহান হোসেন পিপিএম (প্রশাসন ও অর্থ), শরীয়তপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ বদিউজ্জামান, মুলাদী উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব তারিকুল হাসান খান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোঃ আসাদুজ্জামান, সাতক্ষীরা যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোঃ বেল্লাল হোসেন, মুলাদী সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ মতিউর রহমান, মুলাদী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মাহাবুবুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাইনুল আহসান সবুজ ও মুলাদী প্রেসক্লাবের সভাপতি আলমগীর হোসেন সুমন প্রমুখ।
হাজ্বী গ্রুপ ও আকন গ্রুপের মধ্যে শান্তিচুক্তির ৫ মাস ১১ দিন পরই হত্যার ঘটনা ঘটে। ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের টুমচর গ্রামের মোকছেদ আকনের বাড়ির সামনে টুমচর গ্রামের সেকান্দার শাহের ছেলে এবং বাটামারা ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য নার্গিস বেগমের স্বামী মোঃ রুবেল শাহকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
৫ জানুয়ারী শুক্রবার রাত ১১টার সময় বাটামারা ইউনিয়নের চিঠিরচর বাজার এলাকায় ৫-৬টি ককটেল বিস্ফোরণে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে দুর্বৃত্তরা।
৯ জানুয়ারী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাটামারা ইউনিয়নের পশ্চিম টুমচর গ্রামের সাবেক মেম্বার পঁচা মিয়া চৌকিদার বাড়ির সামনে টুমচর গ্রামের মতিউর রহমান সরদারের ছেলে এবং বাটামারার হাজী গ্রুপের লোক রুবেল সরদারকে আহত করেন। ওই সময় হামলাকারীরা ৩০-৩৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। ককটেল বিস্ফোরণে রুবেলের হাত-পায়ের আংশিক ঝলসে গেছে বলে স্বজনরা জানান।
২৭ জানুয়ারী শনিবার রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বাটামারা ইউনিয়নের চিঠিরচর ও টুমচর এলাকায় হাত বোমা ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে টুমচর, চিঠিরচর, তয়কা এবং সফিপুর ইউনিয়নের উত্তর বালিয়াতলী গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে টুমচর গ্রামের ১০টি গরু নিয়ে যায় বিস্ফোরণকারীরা।
১৫ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার সময় বাটামারা ইউনিয়নের টুমচর গ্রামের রুবেল শাহ হত্যা মামলার আসামিরা চিঠিরচর বাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মালেক ঢালীর বসত ভাঙচুর, লুটপাট, রান্না ঘর, লাকরীর ঘর ও গরু ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। রাতে পর পর বিস্ফোরণের শব্দে চিঠিরচর ও আশপাশের গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
১৬ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের তয়কা গ্রামে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. আসাদুজ্জামান কিংকং এর বাড়িতে দুটি ঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে একটি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে যায় এবং আরেকটি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
দীর্ঘ বছর ধরে বাটামারা ও সফিপুরে ইউনিয়নে হাজ্বী ও আকন গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের জের ধরে দুই গ্রুপের মধ্যে বছরের পর বছর হত্যা, ডাকাতি, নারী-শিশু নির্যাতন ও অপহরণের ঘটনা ছিল নিত্য দিনের ঘটনা। এলাকার বিশিষ্টজনদের অভিমত এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পুলিশ ক্যাম্প করা হলেও সন্ত্রাসীদের দাপটে পুলিশ প্রশাসন দুর্বল হয়ে পরে। ২০০০ সালে ঐ এলাকায় পুলিশ অপরাধীদের ধরতে গিয়ে এস আই হামিদকে অপরাধীরা কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে।
পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশী টহল তৎপরতা জোড়দার করা হয়েছে। তাদের তৎপরতা দেখে দুর্বৃত্তরা পার্শ্ববর্তী জেলার মধ্যে চলে যায়। দুই ইউনিয়নের পাশেই মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার অবস্থান হওয়ায় অপরাধীরা সহজেই আসতে ও যেতে পারে। যার ফলে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না অপরাধ প্রোবণতা।